1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

ভারতের মণিপুরে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৭ মে, ২০২৩
  • ৭৪ বার পঠিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে গত তিন দিনের সহিংসতায় অন্তত ৫৪ জন মারা গেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

শুক্রবার রাতে পাহাড়ি এলাকা চূড়াচন্দ্রপুর শহরে উপজাতি মানুষদের এক প্রতিবাদের ওপরে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালায় দুজন নারীসহ তিনজন মারা যান। ওই ঘটনাতেই অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছে চূড়াচন্দ্রপুর জেলা সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক।

পুলিশকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ১৬টি মৃতদেহ চূড়াচন্দ্রপুর জেলা হাসপাতালের মর্গে রয়েছে, ১৫ টি দেহ আছে ইম্ফলের জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে। ইম্ফল ওয়েস্ট জেলার রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে ২৩ টি মৃতদেহ রয়েছে।

তবে কেন্দ্রীয় সরকার নিযুক্ত রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিং সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ২৮-৩০ জন নিশ্চিতভাবেই এই সহিংসতায় মারা গেছেন। আর বাকি মৃতদেহগুলো এই সহিংসতার কারণেই হয়েছে কি না, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে হাইকোর্ট একটা সুপারিশ করার পর থেকে সহিংসতা চলছে।

রাজ্যের পাহাড়ি এলাকাগুলোয় এখনো সহিংসতা চলতে থাকলেও রাজধানী ইম্ফলে শনিবার সকালে নতুন করে কোনো ঘটনা ঘটেনি। যদিও পুরো রাজ্যেই কারফিউ জারি আছে, টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী ও কেন্দ্রীয় অর্ধসৈনিক বাহিনীর সদস্যরা।

কেন্দ্রীয় সরকার বৃহস্পতিবার রাত থেকে সংবিধানের ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে। কেই মেইতেই এবং উপজাতিগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।

বহু বাড়ি, গাড়ি, দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সহিংসতার রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে শনিবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এক সর্বদলীয় বৈঠকে বসেছেন।

চূড়াচন্দ্রপুরে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলি চালনার অভিযোগ
চূড়াচন্দ্রপুরের সরকারি জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছিলেন, ‘সেনাবাহিনী পাহাড় থেকে মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষকে নিরাপত্তা দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ ইম্ফল উপত্যকায় উপজাতি মানুষদের কোনো নিরাপত্তা নেই, তাদের ওপরে আক্রমণ হচ্ছে। উপজাতি মানুষরা দাবী করছিলেন যে এখান থেকে মেইতেইদের যেমন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তেমনই উপজাতির মানুষকেও ইম্ফল থেকে নিয়ে আসা হোক বিনিময় করে। সেই দাবীতেই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন উপজাতি মানুষরা।

‘শহরের ভেনাস হোটেলের সামনে, আমার বাড়ির কাছেই নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালায়। দুজন নারী এবং একজন পুরুষকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। ৩০ জন আমাদের হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভর্তি আছেন। আমি নিজে সার্জেন, তাই দেহের ক্ষতগুলো পরীক্ষা করতে হয়েছে আমাকে।

কেন্দ্র সরকার নিযুক্ত রাজ্যের নতুন নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিং চূড়াচন্দ্রপুরের ওই ঘটনা সম্পর্কে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন যে সেনাবাহিনী আর আসাম রাইফেলসের সদস্যদের সঙ্গে শুক্রবার মানুষের ধস্তাধস্তি হয়। সেনা গুলি চালাতে বাধ্য হয়।

ওই চিকিৎসক বলছিলেন শুক্রবার দিনের বেলায় তার হাসপাতালে চারটি গুলিবিদ্ধ দেহ আসে বিষ্ণুপুর আর চূড়াচন্দ্রপুর জেলার সীমান্ত অঞ্চল থেকে।

‘ওই দেহগুলো দেখে আমার মনে হয়েছে যে নিহদের প্রথমে আটক করে হাত বেঁধে রাখা হয়েছিল। তারপরে অত্যাচার চালানো হয়েছে, আর শেষে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে,’ জানাচ্ছিলেন ওই চিকিৎসক।

সেনাসূত্রগুলো জানিয়েছে মণিপুরের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

‘মণিপুরের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর যেসব সদস্যরা মিয়ানমারের শিবিরে আছে, তারা যাতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসে আরও বেশি সমস্যা তৈরি না করতে পারে, সেজন্য আসাম রাইফেলস ভারত মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা আরও কঠোর করেছে। স্থলপথে তারা যেমন বাড়তি নজরদারি চালাচ্ছে, তেমনই শনিবার সকাল থেকে আকাশপথেও সেনা হেলিকপ্টারগুলি টহল শুরু করেছে,’ বলছে সেনাবাহিনীর ওই সূত্রটি।

মেইতেই আর উপজাতিদের মধ্যে সহিংসতা যেভাবে শুরু হলো
মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতেই গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে তফসিলি উপজাতি বা এসটি তালিকাভুক্ত হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের বসবাস মূলত ইম্ফল উপত্যকায়। এদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করেন যে আদিবাসীরা, তাদের একটা বড় অংশ মূলত কুকি চিন জনগোষ্ঠীর মানুষ। সেখানে নাগা কুকিরাও যেমন থাকেন কিছু সংখ্যায়, তেমনই আরও অনেক গোষ্ঠী আছে।

মেইতেইরা তফসিলি উপজাতির তকমা পেয়ে গেলে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ বঞ্চিত হবেন, এই আশঙ্কা ছিলই।

আবার এখন পাহাড়ি এলাকায় শুধু উপজাতির মানুষদেরই জমির অধিকার রয়েছে, মেইতেইরা তফসিলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি পেয়ে গেলে তারাও পাহাড়ে এসে বসবাস শুরু করবে, তাদের বনজ সম্পদ ধ্বংস হবে, এই ভয়ও আছে উপজাতিদের।

ওইসব পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে সরকার ‘বেআইনি দখলদার’ সরাতে শুরু করেছিল সম্প্রতি। এগুলি সবই নাগা এবং কুকিদের বসবাসের এলাকা ছিল। সেটাও ছিল উপজাতিদের ক্ষোভের একটা কারণ।

এইসব পুঞ্জীভূত ক্ষোভের আগুনে ঘি পরে ৩ মে, যখন হাইকোর্ট মেইতেইদের তফসিলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় কি না, সেটা খতিয়ে দেখার জন্য সরকারকে সুপারিশ করে।

তার বিরুদ্ধে পাহাড়ি উপজাতি জনগোষ্ঠী বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল করে বুধবার।

সহিংসতার শুরু সেখান থেকেই, যা খুব দ্রুত পুরো রাজ্যেই ছড়িয়ে পড়ে।

‘গ্রাম ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছি’
৬৭ বছর বয়সী আন্নু ডৌঙ্গেল তার স্বামী এবং পরিবারের আরও চারজন বৃহস্পতিবার থেকে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। ইম্ফল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে এক উপজাতিদের গ্রামে থাকতেন মিজ ডৌঙ্গেল।

সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে তিনি টেলিফোনে জানিয়েছেন, ‘স্বামী আর আমি দুজনেই সরকারী চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে শান্তিতে থাকতে পারব ভেবে গ্রামে ফিরে গিয়েছিলাম। সেই ঘর ছেড়ে কোনোমতে পালিয়ে আসতে হলো আমাদের।’

‘বৃহস্পতিবার খুব ভোরে খবর আসে যে বহু মানুষ অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে অ-মেইতেই গ্রামগুলো আক্রমন করতে আসছে। তারা নাকি একের পর এক গ্রাম জ্বালাতে জ্বালাতে আসছে। তাড়াহুড়ো করে কিছুটা চাল, কয়েকটা বাসন আর কিছু পোষাক নিয়ে আমরা বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি,’ বলছিলেন আন্নু ডৌঙ্গেল।

এখন তারা আরও অনেকের সঙ্গে পাহাড়ের ওপরে একটা জঙ্গলে ত্রিপল আর বাঁশ দিয়ে তৈরি তাবুতে থাকছেন। চাল ছাড়া আর বিশেষ কিছু নেই, তাই পাহাড়ি ঝরনার জল, বুনো সবজি, শাক এসব খেয়েই কাটছে তাদের।

‘অপারেশনের সামগ্রীও পাচ্ছি না আমরা’
চূড়াচন্দ্রপুর জেলা সরকারি হাসপাতালের যে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হয়, তিনি বলছিলেন, শহরে সব দোকানপাট বন্ধ। খাদ্যসামগ্রী আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।

তিনি নিজে গত তিন দিন ঘুমোতে পারেননি। চিকিৎসক, নার্স সবাই একসঙ্গে হাসপাতালেই থাকছেন, খাচ্ছেন কিন্তু বিশ্রামের সময় বিশেষ পাচ্ছেন না তারা।

‘হাসপাতালে যতজন মেইতেই চিকিৎসক ছিলেন, তাদের বেশিরভাগই পাহাড় ছেড়ে চলে গেছেন। তাই বাকি আমরা যারা আছি, তাদের ওপরেই দায়িত্ব পড়েছে। প্রতিদিন এত গুলিবিদ্ধ মানুষ আর আহতরা আসছেন! চিকিৎসা করতে হচ্ছে, অনেকের অপারেশন করার দরকার, কিন্তু সব সরঞ্জাম এখানে পাওয়া যাচ্ছে না,’ জানাচ্ছিলেন ওই চিকিৎসক।

স্থানীয়ভাবে অপারেশনের অনেক সামগ্রী জোগাড় করতে হচ্ছে তাদের, কারণ ইম্ফল থেকে নতুন করে কিছু আসছে না। আর শহরে যা পাওয়া যাচ্ছে না, সেসব ওষুধ বা চিকিৎসার সরঞ্জাম তারা জোগাড় করছেন পাশ্ববর্তী মিজোরামের বাজার থেকে।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..